বাংলারজমিন
জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে
যশোরের ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
(৮ ঘন্টা আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:৪৩ অপরাহ্ন
যশোরের দুঃখখ্যাত ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সেখানে সরজমিন পরিদর্শনে যান তিন মন্ত্রণালয়ের তিন উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সকালে তারা ভবদহ এলাকাতে চলমান প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করার পাশাপাশি দুর্ভোগ লাঘবে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রথমবারের মতো একসঙ্গে তিন উপদেষ্টা ভবদহ এলাকা পরিদর্শন ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা ভবদহের নেতারা। তারা বলছেন, বিগত সময়ে এভাবে একসঙ্গে তিন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের পা পড়েনি ভবদহে। এবারে তিন উপদেষ্টার আগমনের মধ্যে দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামীতে পদক্ষেপ নিয়ে ভবদহের দুঃখ ঘোচাবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। এসময় তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টারা সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। এরপর সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি টিম, স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনদের নিয়ে ভবদহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেন। সেখানে বছরের পর বছর ভোগান্তিতে থাকা মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। ভোগান্তি লাঘবে আগামীতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণে সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী সরজমিন জায়গা পরিদর্শন ও মতামত গ্রহণ করেন। এরপর বিকালে জেলা প্রশাসকের মিলনায়তনে সুধী সমাজ, ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে, স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা সিংহভাগ লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তিন উপদেষ্টা আগমনে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটি। তারা জনপ্রতিনিধিদের আশারবাণি না শুনিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিবে এমনটা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
ভবদহ পাড়ের মানুষ না হলেও ভবদহের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন বামনেতা ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে যেয়ে পুলিশের হামলায় রক্তও ঝরিয়েছেন তিনি। এই নেতাও তিন উপদেষ্টার আগমনে আশান্বিত হয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর সরজমিন ঘুরে গেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ও সময় বলে গিয়েছিলেন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবদহের স্থায়ী সমাধান হবে। সেই অনুযায়ী ভবদহ এলাকার আমডাঙ্গা খাল খননের টেন্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের যে দাবি ছিলো সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি সরানো বন্ধ করা। সেই জায়গায় স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু। সমমিলিয়ে ত্রাণ, কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আগমনে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে নামে যারা লুটপাট করেছে, তাদেরও বিচার দাবি করেন। উপদেষ্টারা ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন, সেনাবাহিনীর নকশা অনুযায়ী স্থানগুেলো পরিদর্শন করেন। তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবো।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ‘এর আগে উপদেষ্টার নির্দেশে কিছুটা পানি নিষ্কাশন কাজ শুরু হয়েছে। এবার কৃষি, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও এসেছেন। আমরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ চাইছি, কৃষি ঋণ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পানি সেচের নামে লুটপাটকারীদের বিচারের দাবি জানান। নতুন করে উপদেষ্টারা আসাতে আমরা আশার আলো দেখছি। তবে আমরা সরকারের কাছে দ্রুত সফল বাস্তবায়নের দাবি জানাই।