বাংলারজমিন
নীলফামারীতে মব জাস্টিসের শিকার শিক্ষক, ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারধর্ষণের মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে ডোমারের গোমনাতী মডেল একাডেমি নামের একটি কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ মিজান আহমেদের (৪২) ওপর মব জাস্টিটের ঘটনা ঘটেছে। তার বস্ত্রহরণ, মাথার চুল কেটে রঙ মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে বেধড়ক গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পুরো ঘটনাটি হামলাকারীরা ফেসবুকে ছড়িয়ে ওই শিক্ষককে স্কুলের ছাত্রীকে ধর্ষক প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়ে প্রচারণা করতে থাকে। খবর পেয়ে ডোমার থানা পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় আনার পর প্রতিপক্ষের মব জাস্টির আসল ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে। বর্তমানে ওই শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ঘটনায় শিক্ষক মিজান নিজে বাদী হয়ে মব জাস্টিস গ্রিন স্টার একাডেমির অধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম বাবুকে প্রধান আসামি করে ৮ জন নামীয়সহ আড়াইশ’ জনের নামে ডোমার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি এলাকায় সাধারণ মানুষজনের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ডোমার থানার ওসি আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ১৯শে এপ্রিল শনিবার দুপুরের এই ঘটনায় ওই শিক্ষক মব জাস্টিসের অভিযোগ এনে ২০ এপ্রিল রোববার রাতে ডোমার থানায় নামীয় ৮ জনসহ অজ্ঞাত আড়াইশ’ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। সকল আসামি আত্মগোপন করলেও তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ওসি জানান, প্রাথমিক তদন্তে গুজব ছড়িয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে তারা মব জাস্টিট তৈরি করে ওই শিক্ষককে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ওসি আরও জানান, যে ছাত্রীকে ধর্ষণের গুজব তোলা হয় সেই পরিবারের অভিভাবকরাও থানায় এসে মব জাস্টিস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, যায়, ডোমার উপজেলার গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ হিসেবে মিজান আহমেদের সুনাম ছড়িয়ে পড়লে ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এরফলে একই এলাকার কতিপয় সুযোগসন্ধানী গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষের সুনাম ক্ষুণ্ন্ন করার চেষ্টা চালাতে থাকে। ঘটনার দিন শনিবার ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ মিজান আহমেদ এমন গুজব ছড়িয়ে আসামিগণ গোমনাতী মডেল একাডেমিতে এসে হামলা চালাতে থাকে। এরপর অধ্যক্ষ মিজানকে টেনে-হেঁচড়ে বাইরে বের করে বস্ত্রহরণ, মাথার চুল ও মুখের দাড়ি কেটে রঙ লাগিয়ে গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে বাজারে ঘুরাতে থাকে। যা ফেসবুকে সরাসরি ধর্ষক পরিচয় দিয়ে প্রচারণা চালাতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে হত্যার চেষ্টায় গণহারে পিটাতে থাকলে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে যে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় সেই ছাত্রীর অভিভাবকরা এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।
ওই ছাত্রীর বাবাও নিজে এসে মব জাস্টিসকারীদের বিরুদ্ধে ডোমার থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানান, আসামিরা আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে আমার ও আমার মেয়ের সম্মানহানি করেছে। তিনিও এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।