দেশ বিদেশ
কমিশনের সঙ্গে বৈঠক
নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণঅধিকার পরিষদের
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবারজাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছর ও সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ২৫ বছরের পরিবর্তে ন্যূনতম ২৩ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে গণঅধিকার পরিষদ। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে এলডি হলের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এ কথা জানান। সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। নুরুল হক নুর জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবনার মধ্যে তাদের দল ১৩৫টিতে একমত, ৭টিতে একমত নয় এবং ২৩টিতে আংশিক একমত পোষণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা চাই সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কেবল রাজনৈতিক দল নয়, জনগণেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। এজন্যই আমরা গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া সংসদের মেয়াদ ৪ বছর, সংসদ সদস্য হওয়ার বয়সসীমা ২৩ বছর করা এবং নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি অফিসের কর্মঘণ্টা অর্ধেকে নামানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন। নুর বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, সংসদ সদস্যরা যেন আস্থা ভোট এবং অর্থ বিলে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে না পারেন। এতে সংসদ সদস্যদের বিক্রি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আমরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ৪ বছর এবং কেউ পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, একজন ব্যক্তি একসঙ্গে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানের নিয়োগ জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদের অধীনে করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৪ মাস, স্থানীয় সরকারে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন ও উচ্চ কক্ষে সংসদ সদস্য সংখ্যা ১০০; যার ২০ শতাংশ নারী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পেশাজীবী। এ ছাড়া পেশাজীবীদের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হওয়া ঠেকাতে শাস্তির বিধান এবং নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য অন্তত ৩-৪ বছর সক্রিয় অংশগ্রহণের শর্ত রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, আমরা জাতীয় সনদে সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর চাই। এই সনদ গণভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ তা বাতিল করতে না পারে। আর সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও মূলনীতি সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে কিছু বিষয়ে সংসদ সদস্যরা সংশোধনের ক্ষমতা রাখবে। বলেন, জাতীয় স্বার্থে আমরা সব ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত। আমরা সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য চাই। বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা। সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা একটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। এই পরিবর্তনকে অর্থবহ করতে কেবল সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যথেষ্ট নয়। বরং সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।
এই আলোচনা কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাজপথে ও রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা।
বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ফারুক হাসান, উচ্চতর সদস্য খালিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান রিজু, সাকিব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক শাকিলুজ্জামান, মানবাধিকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক ফাতেমা দিশা, যুব উইংয়ের সদস্য মুমতাজুল ইসলাম, গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ উপস্থিত ছিলেন। ওদিকে, অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।