ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

জ্বালানি বিভাগের নতুন নির্দেশনা পেট্রোবাংলায় স্থবিরতার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নতুন নির্দেশনার ফলে বিতরণ কোম্পানি তথা পেট্রোবাংলায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের মূল লক্ষ্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। সে লক্ষ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে বলছেন তারা। বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা ক্ষমতাকে আরও কুক্ষিগত করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে ইস্যু করা একাধিক পত্রের প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেছেন জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি বিভাগের ইস্যু করা নতুন আদেশের ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর ক্ষমতা শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাদের আর কোনো ক্ষমতাই থাকছে না।
সর্বশেষ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২১শে এপ্রিল ইস্যু করা এক চিঠিতে শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১৬ই এপ্রিল সভার রেফারেন্স দিয়ে লেখা চিঠিতে, শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্দেশনায় জরুরি প্রয়োজনে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কেস টু কেস ভিত্তিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা যেতে পারে। বিষয়টি সকল গ্যাস বিপণন ও বিতরণ কোম্পানিকে অবহিত করার জন্য পেট্রোবাংলা থেকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে ১৬ই এপ্রিল উপ-সচিব রুবায়েত খান ৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে বলা হয়, গ্যাস সংযোগ প্রদানের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে আবেদনসমূহকে নতুন সংযোগ, লোডবৃদ্ধি এবং প্রতিশ্রুত-এই ৩ ভাগে বিভক্ত করতে হবে। তারপর গ্যাস বিতরণ কোম্পানিসমূহ কর্তৃক গ্যাসের পর্যাপ্ততা বিবেচনায় নিয়ে একটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলায় পাঠাতে হবে। নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাহকের গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য হবে রাজস্ব বৃদ্ধি করা, এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সংযোগের অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যালোচনা করতে হবে। শিল্প শ্রেণিতে নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল এবং রপ্তানিমুখী শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এরূপ নতুন সংযোগ অথবা লোডবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যে অতিরিক্ত গ্যাস বরাদ্দ প্রয়োজন তা নিরূপণ করে যথাসময়ে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
প্রথম দফার চিঠিতে বিষয়টি কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও পরের চিঠিতে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হয়। আর এখানেই আপত্তি উঠতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে বিতরণ কোম্পানির কাজটি কি? বোর্ডগুলোতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র সচিব রয়েছেন। রয়েছেন একাধিক অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব। তারা কি তাহলে শুধু মন্ত্রণালয়ে প্রেসক্রিপশন অনুমোদন দিবেন!
আবার প্রথম দফায় ইস্যু করা চিঠির পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, নতুন সংযোগ অথবা লোডবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যে অতিরিক্ত গ্যাস বরাদ্দ প্রয়োজন হবে, তা নিরূপণ করে যথাসময়ে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি যেন এমন-কাল তিতাস কিংবা কর্ণফুলী নতুন গ্যাস সংযোগ অনুমোদন দিবে, পরদিন থেকে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে দিবে। যাতে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, মনে হচ্ছে দেশে কোনো গ্যাস সংকট নেই। বাড়তি লোড অনুমোদন হলে সেটুকু চাহিদা পেট্রোবাংলা সমাধান করলেই মিটে যাবে। কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, (পেট্রোবাংলার হিসাব মতে) দেশের প্রতিশ্রুত (ইতিমধ্যে অনুমোদিত) গ্রাহকদের গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৫৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট আর সরবরাহ দেয়া হচ্ছে মাত্র ২৭০০ মিলিয়নের মতো। তারা বলছেন, অর্ধেকের বেশি এখনো ঘাটতি রয়েছে। প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে হলে দৈনিক আরও ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা দরকার। যদিও পেট্রোবাংলা মনে করে গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সে হিসাব ধরলেও ঘাটতি প্রায় ১৩০০ মিলিয়ন।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status