দেশ বিদেশ
ডলারের বিপরীতে সামান্য শক্তিশালী হলো টাকা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি বিল পরিশোধের চাপ ও ডলারের চাহিদা কমায় মুদ্রাটির দাম সামান্য কমেছে। ফলে টাকা শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সামনের দিনে ডলারের দাম আরও কমতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত কয়েক মাস ধরে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে দেশে। এর সঙ্গে রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর ওপর বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধের চাপ ও ডলারের চাহিদা কমেছে। এতে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে।
গত বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোকে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৬০ পয়সা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। অথচ চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও ব্যাংকগুলোকে দিতে হতো ১২৩ টাকা থেকে ১২৩ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম কমেছে ৫০ থেকে ৭০ পয়সা।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের পূর্বাভাস, সামনের দিনগুলোতে ডলারের দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলছেন, আগামী কয়েক মাসে ডলারের চাহিদা বাড়ার বড় ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আগামী নির্বাচনের অপেক্ষা করছেন। ফলে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত আমদানি বাড়বে না।
এদিকে, বাজারে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার চাপে এখনই ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে না।
এদিকে গত সরকারের সময়ে জ্বালানি খাতের যে ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ ছিল সেটাও কমে এসেছে। বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময়ে বাংলাদেশের শুধু বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বকেয়া, এলএনজি ও তেলের পাওনা (বকেয়া) ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। গত আট মাসে সেটা কমিয়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে আসা হয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২১শে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেমিট্যান্স পেয়েছে ২৩.৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৬ শতাংশ বেশি। অবশ্য টাকার বিপরীতে ডলারের দর কিছুটা কমে আসার পেছনে মুদ্রাটির দাম ১২৩ টাকার নিচে রাখার নির্দেশনার প্রভাবও কিছুটা কাজ করছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা।
ব্যাংকগুলোও খুব প্রয়োজন না হলে ১২৩ টাকার বেশি দরে ডলার কিনছে না। বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফা করছি। ডলারের দাম মূলত সরবরাহ বাড়ার কারণে কমছে। গত দুই বছরের মধ্যে ডলারের সরবরাহ এখন ভালো অবস্থানে আছে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ হয়ে এসেছে। এর অন্যতম কারণ, ব্যাংকগুলোর ওভারডিউ পেমেন্টের পরিমাণ কমে এসেছে। ফলে এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর আগে যে চাপটা ছিল, সেটাও কমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও ডলারের দাম মূলত সরবরাহ বাড়ার কারণে কমছে বলে মন্তব্য করেন আরেকটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ডলারের বাজার সব সময়ই চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে ডলারের সরবরাহ গত দুই বছরের মধ্যে অন্যতম ভালো অবস্থানে আছে। অন্যদিকে, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ বিনিয়োগ খাতে আমদানি অনেক কমে গেছে। ফলে ডলারের চাহিদা কম। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে ডলারও আগের তুলনায় বেড়েছে এবং রেট কমার ধারায় চলে এসেছে।
আরেক ব্যাংকার বলেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় ডলারের দরপতন হয়েছে। ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। ফলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি সেভাবে নেই। রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির যে চাপটা থাকে, সেটি এখন নেই। সবমিলিয়ে ডলারের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে-যার কারণে ডলারের রেটও কমছে।