দেশ বিদেশ
ইউএনও পদে নিয়োগ পেলেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের। ইতিমধ্যে বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুনুল হককে। ২০১৮ সালে বিসিএস এডমিন ক্যাডারে যোগদান করা মামুনুল সবশেষ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর প্রটোকল অফিসার ছিলেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পদে ছিলেন। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে মামুনুল হক কৌশলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় গত ৯ই এপ্রিল মামুনুল হককে ইউএনও হিসেবে পুরস্কৃত করে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় পদায়ন করে। সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পদে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন ছাত্র খুন হন ছাত্রলীগের হাতে। মামুনুল হকের অনুসারীরাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ছাড়া হল দখলে মামুনুলের অনুসারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। মামুনুল হকের অনুসারী হাবিবুর রহমান রবিন, জালাল আহমেদ, রুপম বিশ্বাস, বোরহান, বাইজিদ সজল, এসএম আরিফুল ইসলাম, মনসুর সিকদারসহ ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খুনসহ নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বগিভিত্তিক সাতটি সশস্ত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন মামুনুল হক। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি আনোয়ারুল আজিম আরিফের নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের ‘সদস্য’ ছিলেন তিনি। মামুনুল হককে ‘ম্যানেজ’ করতে পারলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগ পেতো প্রার্থী। অভিযোগ আছে, উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারিও নিয়ন্ত্রণ করতেন সভাপতি মামুনুল হক ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী। মামুনুল হক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক অনুসারী হিসেবে পরিচিত হলেও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদের তদবিরে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হন। পরবর্তীতে হাসান মাহমুদের খুঁটির জোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাসের পর দলীয় বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার বৈতরণী সহজেই পার হন মামুনুল হক। যোগ দেন এডমিন ক্যাডারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির পদের জোরে ঢাকার রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পরবর্তীতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর প্রটোকল অফিসারের দায়িত্বও পালন করেন। তবে এই বিষয়ে ইউএনও মামুনুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমি ব্যক্তি মামুনকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাই চেনেন। আমি কোন খারাপ করছি কিনা সেটি যাচাই-বাছাই করুন। আমি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কারও ক্ষতি করিনি, কোনো অপকর্মে ছিলাম না। আমি রাজনীতি ছেড়ে গত ৮ বছর চাকরি করছি।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিনকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আনোয়ার পাশাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কর্মকর্তা কোথায় পড়েছে সেটা আমরা জানি না, জানার কথা না। আমরা এক প্রজন্মের সে আরেক প্রজন্মের। মামুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ইউএনও ফিডলিস্টভুক্ত কর্মকর্তা। তাকে এখানে ইউএনও কর্মকর্তা হিসেবে পোস্টিং দেয়ার জন্য পাঠিয়েছে সরকার। সরকার পাঠালে বিভাগীয় কমিশনার অফিস তাকে বিলাইছড়ি পদায়ন করেছে। বিলাইছড়ি এত গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বলে মনে হয় না, এটা নিয়ে কেন এত ইস্যু তাও আমরা জানি না।’