দেশ বিদেশ
যুদ্ধবিরতি কার্যকর
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা উল্লেখ করে না কেন ভারত
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। খুবই আশা ও স্বস্তির কথা। কারণ, তারা পারমাণবিক যুদ্ধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা গোপন গোয়েন্দা তথ্য পান। কি সেই গোয়েন্দা তথ্য সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি। শুধু জানা গেছে, সেসব তথ্য খুবই স্পর্শকাতর। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, এক্ষেত্রে পারমাণবিক হামলার হুমকি বা প্রস্তুতি ছিল হয় ভারত বা পাকিস্তানের। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ‘চাপে’ পড়ে যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে তা কতোক্ষণ বা কতোদিন স্থায়ী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে বিতর্কিত কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সঙ্গেই একত্রে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তারা এ সমস্যার সমাধানে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করে এসেছে সব সময়। এখন কথা হলো এই যে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত এসেছে, এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান একরকম প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে সবার আগে ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা জানিয়েছেন। এতে পাকিস্তান একরকম প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ভারত যুদ্ধবিরতিতে গেলেও তাদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের, ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকার কোনো উল্লেখ নেই। ওদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে ভারত ৫টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে এগুলো গুলি করে ভূপাতিত করেছে তারা। এর মধ্যে আছে ফ্রান্সে তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান। বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ মিডিয়াকে দেখিয়েছে পাকিস্তান। তা যাচাই করেছে বিবিসি সহ বিভিন্ন মিডিয়া। এরপর তারা বলেছে, ওই ধ্বংসস্তূপ রাফাল বিমানের। অনেকে বলেন, এই যুদ্ধবিমান হারানো ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই লড়াইয়ে। তবে এ বিষয়ে ভারত টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিমান হারানোর কারণে ভেতরে ভেতরে বেশ চাপে আছে মোদি সরকার। বিশেষ করে বিরোধীদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে চাপে পড়তে পারে সরকার। যুদ্ধের কৌশলই হলো যতক্ষণ শ্বাস থাকে ততক্ষণ লড়াই করতে হয়। এ জন্য যে বা যারা দুর্বল হয়ে পড়ে, তারা তা স্বীকার করে না। এক্ষেত্রে প্রচার প্রপাগান্ডায় তারা এগিয়ে থাকে। ওদিকে পাকিস্তানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয় চীন, তুরস্ক ও আজারবাইজান। এর ফলে তাদের শক্তি আরও বেড়ে যায়। অনেকে বলেন, চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এবার অনেক ভালো বলে তারা ২০২৫- এর এই যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, গোলাগুলি এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান। যেকোনো রকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো আপস নয় এবং কঠোর অবস্থানে থাকবে ভারত। এটা অব্যাহতভাবে ভারত বলে আসছে। অব্যাহতভাবে তা করে যাবে ভারত। ওদিকে তার পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, শনিবার বিকালে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালক ভারতের মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালককে ফোন করেছিলেন এবং একমত হয়েছেন তারা। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কোনো উল্লেখ নেই। পক্ষান্তরে বিক্রম মিশ্রি যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে ভারতের উদ্যোগকে বড় করে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশন্সের মহাপরিচালক ভারতের মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালককে ফোন করেছিলেন এবং তারা একমত হয়েছেন। অর্থাৎ নতি স্বীকার করেছে পাকিস্তান। তারা ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির জন্য ফোন করে কথা বলেছে এবং দুই পক্ষ তারপর একমত হয়েছে। তাহলে মার্কো রুবিও যে বললেন, তারা ৪৮ ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করেছেন। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এরপর যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তার কী হবে? একটু পেছন ফিরে যদি আমরা ঘটনাকে দেখি তাহলে দেখতে পাবো, পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াই শুরু হলে তাতে শুধু ভারত-পাকিস্তানের যে অসীম ক্ষতি হতো, তা-ই নয়। একই সঙ্গে ভারতীয় এই উপমহাদেশ এমনকি বিশ্ব জুড়ে এর বিরাট প্রভাব পড়তো। গাজা-ইসরাইল যুদ্ধের প্রভাব যতটা পড়েছে, তার চেয়ে বেশি হতো এর প্রভাব। কারণ, ইসরাইল নৃশংস যুদ্ধ করছে কার্যত একটি নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাদের স্বল্পসংখ্যক সদস্য হামাসে যোগ দিয়েছেন। অস্ত্র বলতে তাদের কাছে আছে কিছু রকেট, ইটপাটকেল। এটা দিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ইসরাইলের বিরুদ্ধে টিকে থাকা কঠিন। তবু হামাস সাহসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। যদি এই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার একবার হতো, তাহলে অগণিত মানুষের প্রাণহানি হতো। হয়তো সৃষ্টি হতে পারতো আরেকটা হিরোশিমা-নাগাসাকির উদাহরণ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হতো উভয় পক্ষে। এর ভার পৃথিবী সইতে পারতো না। আন্দাজ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যে স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্যের সন্ধান পেয়েছে তা ছিল এই পারমাণবিক অস্ত্র। এমন ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তাকে বলেন পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপে পড়ে মোদি সরকার হয়তো যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়েছে।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১০ই মে তীব্র লড়াইয়ের পর সকালে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের সঙ্গে। এ সময় তাদেরকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান। এ কথা বলা হয় মিডিয়ায়। কিন্তু আসলে পর্দার আড়ালে তখন উভয় পক্ষকে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। শনিবার বিকালে যখন অবশেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করলেন- যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শুক্রবার দিবাগত রাতে দীর্ঘসময় আলোচনার পর আমি সন্তুষ্টির সঙ্গে এ ঘোষণা দিচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সাধারণ জ্ঞান এবং ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের জন্য উভয় দেশকে অভিনন্দন জানাই। এ বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। এ ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। নিরপেক্ষ কোনো স্থানে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা শুরুর করতে রাজি হওয়ার জন্যও অভিনন্দন জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুবিও বলেন, ৪৮ ঘণ্টা ধরে তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও অসিম মলিক। রুবিও লিখেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শেহবাজ শরীফের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার প্রশংসা করি। ওদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, গোলাগুলি এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান। যেকোনো রকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো আপস নয় এবং কঠোর অবস্থানে থাকবে ভারত। এটা অব্যাহতভাবে ভারত বলে আসছে। অব্যাহতভাবে তা করে যাবে ভারত।
ওদিকে তার পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, শনিবার বিকালে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালক ভারতের মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালককে ফোন করেছিলেন এবং একমত হয়েছেন তারা। তিনি সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতের স্থানীয় সময় শনিবার বিকাল ৫টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে উভয় পক্ষই স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে সব রকম লড়াই বন্ধ রাখবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব কারও প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকার কথা বলা হয়নি।