বাংলারজমিন
হজে গিয়ে মালিকের মৃত্যু, বর্গা চাষিই এখন জমির মালিকানার দাবিদার!
লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবারপ্রথমে ছিলেন বর্গা চাষি। এরপর বছর বছর লগ্নি চাষি। জমির মালিক মারা যাওয়ার পর হঠাৎ ভুয়া বায়না চুক্তি দাঁড় করিয়ে জোর করে জমি দখল করে রেখেছেন মো. রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি। ভুয়া বায়না চুক্তি ধরা পড়ায় জেলও খেটেছেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে ওই জমি ফের দখল করে রেখেছেন রুহুল আমিন। তিনি মানছেন না আইনকানুন, নিয়মনীতি এবং সালিশ বিচার। এ যেন রুহুল আমিনের জোর জুলুমের রাজ্য। এমনকি ওই জমিতে মালিকপক্ষ গেলে তাদের খুন, জখম করা হবে, না হয় নিজের লোককে খুন করে জমির মালিকদের ফাঁসানো হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন রুহুল আমিন। এ ঘটনা ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরছকিনা এলাকায়। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী মো. রাশেদ খান অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা মৃত মো. ফরিদ উদ্দিন খান ১৯৯৫ সালে ২৮০১ নম্বর দলিল মূলে চরছকিনা মৌজার ১০৩৯ নম্বর খতিয়ানে ১.৩২ একর এবং একই মৌজার ১০৫৩ খতিয়ানের ২৮ শতাংশ মোট ১.৬০ একর জমি ক্রয় করে ভোগ দখল করেন। যার বর্তমান বিএস নং ৩৫৮৩। বাবা জীবিত থাকা অবস্থা থেকে ওই জমি পার্শ্ববর্তী বাড়ির মো. রুহুল আমিন বর্গা এবং লগ্নি রাখছেন। ২০১৯ সালে আমার বাবা হজ করতে গিয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর রুহুল আমিনের নিকট জমি লগ্নির টাকা চাইতে গেলে তিনি দেই-দিচ্ছি বলে সময় পার করতে থাকেন। কিছুদিন পর রুহুল আমিন একশ’ টাকার ৩টি স্ট্যাম্পে আমার বাবার নামে একটি বায়না চুক্তি আমাদের দেখিয়ে জানান এই চুক্তির মাধ্যমে তিনি আমাদের জমি ক্রয় করেছেন। তিনি আরও বলেন, তখন বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বসে মীমাংসা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। যার ফলে ওই বায়না চুক্তির ফটোকপি নিয়ে আমি লালমোহন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে খোঁজ নিয়ে কোনো সত্যতা পাইনি। যার জন্য আমি ভোলা আদালতে ওই ভুয়া বায়না চুক্তির বিরুদ্ধে মামলা করি। আদালতের বিচারকের নির্দেশে ওই মামলা তদন্ত করা হয়। একইসঙ্গে খুলনা ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে আমার বাবার আঙ্গুলের ছাপ বায়না চুক্তিতে আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে না মেলায় বায়না চুক্তিটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। এরপর ভুয়া বায়না চুক্তি করার কারণে মো. রুহুল আমিন জেলে যান। তখন তিনি আমাদের জমি আমাদেরই বুঝিয়ে দেবেন এই অঙ্গীকার করে বের হন। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে যান এবং আমাদের জমিতে আমরা গেলে আমাদের খুন ও জখম করার হুমকি দেন। তা না করতে পারলে তার পরিবারের সদস্যদের জমিতে নিয়ে খুন করে আমাদের ফাঁসাবেন বলেও হুমকি দেন। আদালতে ওই মামলাটি এখনো চলমান। প্রতারক রুহুল আমিনের এই জোর-জুলুম থেকে আমরা বাঁচতে চাই এবং আমাদের জমি নিরাপদে ভোগদখল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। অভিযোগের ব্যাপারে মো. রুহুল আমিন জানান, ওই জমি আমার না, তা সত্য। তবে আমি যেহেতু দীর্ঘদিন জমি রক্ষণাবেক্ষণ করেছি, তাই ওই জমির বর্তমান ওয়ারিশদের কাছে থেকে আমি কিনে রাখতে চাই। কারণ তারাও এ জমি বিক্রি করবেন। এ ছাড়া হত্যার হুমকির অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা। এ বিষয়ে লালমোহন থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আমাদের থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।