বাংলারজমিন
মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
মোবাইল চোরকে সহযোগিতা করাই কাল হলো
স্টাফ রিপোর্টার
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবারকুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মোবাইল চোরকে সহযোগিতা করায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বাচ্চু মিয়া, বায়েজ মাস্টার, রবিউল আউয়াল, আতিকুর রহমান, দুলাল এবং আকাশ। কুমিল্লা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ও ১টি টর্চলাইট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন সরাসরি মামলার আসামি এবং বাকিরা তাদের সহযোগী। এ ঘটনায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১লা জুলাই। বোরহান নামের এক যুবক মুরাদনগরের টনিবাড়ি এলাকায় এক স্কুলশিক্ষকের মোবাইল চুরি করে। এলাকাবাসী তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বাচ্চু মেম্বার বিষয়টি শালিসের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে পরদিন বোরহানের বাবা থানায় বাচ্চু মেম্বারসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত হয়। তদন্তে জানা যায়, মোবাইল চোর বোরহানের পরিবারের সঙ্গে নিহত রুবী আক্তারের যোগাযোগ ছিল। বোরহানের পরিবারকে সহযোগিতা করছিল নিহত রুবী আক্তার তার-ই প্রেক্ষিতে এ ঘটনা ঘটে, বোরহানের বাড়ি আর মনির হোসেনের বাড়ি পাশাপাশি। মোবাইল চুরির ঘটনার পর বোরহানের বাবা রুবী আক্তারের সাহায্য চায়। এ সহযোগিতার বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই নিহতদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়। র্যাব জানায়, ২রা জুলাই রাতের পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন ৩রা জুলাই সকালে বাচ্চু মেম্বার, রবিউলসহ একদল লোক রুবী আক্তারের বাড়িতে যায়। সেখানে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রুবী আক্তার ও তার মেয়ে চেয়ারম্যান ও বাচ্চু মেম্বারের গায়ে হাত তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে রুবী আক্তার, তার মেয়ে জোনাকি এবং ছেলে রাসেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। র্যাবের দাবি, নিহতদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ এবং তাদের প্রতি এলাকাবাসীর আক্রোশ ছিল। রুবী আক্তারের বিরুদ্ধে ১১টি এবং তার ছেলে রাসেলের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। তবে মোবাইল চুরির মূল অভিযুক্ত বোরহানের অবস্থান এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাকে খুঁজতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, মব করতে কোনো রাজনৈতিক দল শেখায় না। মব হঠাৎ যেকোনো প্রেক্ষাপটে হয়ে যায় কারও হাতে এটির নিয়ন্ত্রণ নেই। বিভিন্ন মবের পেছনের কারণ বিভিন্ন রকম।
মব তৈরি করে আইন কারও হাতে নেয়া উচিত না, কেউ অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে বলে জানান তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ঘটনায় সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে না, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।