ভারত
নারী সেনা অফিসারকে নিয়ে মন্তব্য
মন্ত্রীকে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভৎর্সনা
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(৬ দিন আগে) ১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ৭:৩৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২০ অপরাহ্ন
এক ভারতীয় নারী সেনা অফিসারকে নিয়ে 'জঘন্য, নোংরা ও লজ্জাজনক' মন্তব্য করায় মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপির মন্ত্রীকে সুপ্রিম কোর্ট তীব্র ভৎর্সনা করেছেন। মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে মন্তব্য করেছেন, কুমিরের কান্না কাঁদবেন না। আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা জঘন্য, নোংরা ও লজ্জার। আপনার মন্তব্য গোটা দেশের মাথা হেঁট করে দিয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর ও সেই পরিপ্রেক্ষিতে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির উদ্দেশ্যে বিজয় শাহর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ খারিজ ও গ্রেপ্তারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজয় শাহ।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং গ্রেপ্তারির নির্দেশ না দিলেও তীব্র ভর্ৎসনা করে গোটা বিষয়টি আদালতের নজরদারিতে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
মধ্যপ্রদেশ পুলিশের মহাপরিচালককে একজন উচ্চ পদ মর্যাদার আফিসারের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতিরা বলেন, তদন্তকারী দলের সদস্যদের বাছাই করতে হবে রাজ্যের বাইরে থেকে। তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনকে নারী হতে হবে। ২৮ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগেই ওই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। তদন্ত দল গঠন করতে হবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে।
বিচারপতিরা বলেছেন, মন্ত্রী বিজয় শাহকে তদন্তকারী দলের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সময়ে সাংবাদিকদের প্রতিদিন ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে উপস্থিত থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করতেন কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাদের দেওয়া বর্ণনা সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
কিন্তু এই সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রী বিজয় শাহ এক জনসভায় বলেছিলেন, পেহেলগামে যারা বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছিল, সেই সন্ত্রাসবাদীদের বোনকে (সোফিয়া) দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের (সন্ত্রাসী) মোক্ষম জবাব দিয়েছেন।
এই ভাষণ শুনেই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন ও অনুরাধা শুক্লা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশকে এফআইআর দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারী বিজয় শাহের পক্ষে আইনজীবী মনিন্দর সিং বলেন, তাঁর মক্কেল ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সেই ক্ষমা গ্রহণ করা হোক। সেই আবেদন অগ্রাহ্য করে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘ক্ষমা? কোন ক্ষমা? তিনি তো দায় নিতেই চাইছেন না। কেউ কেউ আইনের হাত থেকে বাঁচতে ক্ষমা চান, কেউ কেউ কুমিরের কান্না কাঁদেন। এটা কোন ধরনের ক্ষমা? এই ক্ষমা প্রার্থনা আমরা গ্রাহ্য করছি না। এটা স্রেফ মামলার হাত থেকে বাঁচতে চাওয়া।
মন্ত্রীর উদ্দেশে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, আপনি জননেতা। একজন দক্ষ রাজনীতিক। কী বলছেন, কখন বলছেন, সেই জ্ঞান আপনার থাকা উচিত। আপনার ভাষণের ভিডিও এখানে চালাতে পারি। দেখা যাবে, আপনি একটা সময় নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
বিচারপতিরা মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সমালোচনা করে বলেন, হাইকোর্ট বলেছেন বলে কাজ করেছেন। কিন্তু এফআইআরটাও ঠিকমতো করেননি। হাইকোর্ট কঠোরভাবে তা দ্বিতীয়বার করতে বলেছেন। জনগণ রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ দেখতে চায়। এত দিনে আপনাদেরও আরও কিছু করা উচিত ছিল।