দেশ বিদেশ
সরকার গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করছে না- প্রেস সচিব
স্টাফ রিপোর্টার
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবারআওয়ামী লীগ সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথে হাঁটেনি মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বিগত সরকারের আমলে সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১১ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার মুক্ত সংবাদমাধ্যমের জন্য একটা কার্যকর জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করেছে। যাতে সবাই সাংবাদিকতা করতে পারে। ইতিমধ্যে ডিজিটিাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করে নতুন অ্যাক্ট করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডেইলি স্টার ভবনে ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, আগে পিএম অফিসের একজন ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মনস্টার ছিলেন। উনার জন্য এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা তো সে জায়গায় যেতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাক। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ, লিগ্যাল এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে চাপ দেয়া- এই তিনটি জায়গায় এই সরকার ন্যূনতম কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। কোনো এজেন্সি যাতে গণমাধ্যমকে ভয় দেখাতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটা আমাদের মাথার ওপর একদম একটা খড়গ হিসেবে ছিল; যেটা ব্যবহার করে একটা হিসাবে এসেছে- সাত হাজারের বেশি কেইস করা হয়েছে। মেইন টার্গেট ছিল বাকস্বাধীনতাকে ব্যাহত করা। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে মানুষ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় কথা বলতে পারতো না অনেক ক্ষেত্রেই; ফেসবুক বা ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়াকে সবার কণ্ঠস্বরকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা যন্ত্র বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আসে। আমরা প্রথম যে কাজটা করেছি, এই পুরো আইনটাকে বাদ দিয়েছি। শফিকুল আলম বলেন, কেউ বলতে পারবে না এটার মাধ্যমে কারও বাকস্বাধীনতায় আমরা আক্রমণ করেছি। শুধু এই আইন না, আরও অনেকভাবেই বাংলাদেশে মানুষের মুখ বন্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করেছিল। আগে যেটা ছিল গোপন কোনো সংস্থাকে দিয়ে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে আপনার মুখটাকে বন্ধ করা। আমরা এটা বন্ধ করতে পেরেছি। আমাদের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, কোনো ধরনের কোনো সিক্রেট এজেন্সি, কোনো ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি যেন কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিককে একটা যেন ফোন না করে। তিনি বলেন, যদি কেউ ভুল তথ্য দেয়, অপতথ্য দেয়, সরকারের একটা মেকানিজম আছে; সরকার সেটা দেখবে। আমরা বলবো, যে এই নিউজটা ভুল আছে। আপনি এই জিনিসটা ঠিকমতো দিচ্ছেন না। তবে আপনারা কেউ যদি কোনো থ্রেট পান, আমি আবার আপনাদের বলছি, আমাদের জানাবেন। কেননা এই জিনিসটা এরকম না যে আগে কয়দিন হয় নাই দেখে নতুন করে আর হবে না। বা দু’-একটা হয় নাই। আমরা চাই আপনারা এই বিষয়ে সোচ্চার হন। শফিকুল বলেন, আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোর কিন্তু শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে ব্যর্থতা ছিল। এখন এই ব্যর্থতাকে আপনি কীভাবে অ্যাড্রেস করবেন- এটা নিয়েই কিন্তু অনেকে অনেক কথা বলছে। যখনই আরেকবার নতুন করে ফেইলিউর হয়, তখন অনেকেরই সেই স্মৃতিটা চাড়া দিয়ে ওঠে। এবং চাড়া দিলে অনেকে প্রতিবাদ করেন, অনেকে মিছিল-মিটিং করতে চান। তখন আবার অনেকে বলেন যে মব তৈরি হয়েছে। যারা সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের এই প্রতিবাদ করার তো অধিকার আছে। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. গীতি আরা নাসরীন, যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের সভাপতি রেজোয়ানুল হক রাজা, সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন।