দেশ বিদেশ
ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা
নতুন আক্রান্ত আরও ৬৬ জন লক্ষণ নিয়ে শিশুর মৃত্যু
বরগুনা প্রতিনিধি
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবারডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনায় নতুন করে আরও ৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ৪ দিনে জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩২ জন। আর চলতি বছর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৫৭ জনে এবং এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যা যেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। এদিকে শনিবার (৫ জুলাই) বেলা ১টার দিকে জেলার বামনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব আবদুর রহমান মল্লিকের শিশুকন্যা রাইছা (১১) ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। শিশুটিকে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার আগেই মারা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান।
শনিবার (৫ জুলাই) বরগুনার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা যায়, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ৬৬ জন, আমতলী উপজেলায় ৫ জন, বেতাগী ও তালতলী উপজেলায় ১ জন করে এবং বামনা পাথরঘাটা উপজেলায় ২ জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ২২৭ জন। এদের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮১ জন, বামনায় ১৮ জন, পাথরঘাটায় ১০ জন, তালতলী উপজেলায় ৯ জন, আমতলী উপজেলায় ৬ জন, বেতাগীতে ৩ জন এবং চিকিৎসাধীন।
জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৯৪ জন, তালতলী উপজেলায় ৪৭ জন, বামনা উপজেলায় ৯৬ জন, বেতাগী উপজেলায় ৩৫ জন, আমতলী উপজেলায় ৪২ জন এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ১৪৩ জন।
অন্যদিকে, জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায় এবং ১ জনের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলায় এবং ৩ জনের বাড়ি বেতাগী উপজেলায়। এদের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালেই মারা গেছে ৬ জন। অন্যরা সবাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল কিংবা বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়ার পথে কিংবা হাসপাতালে মারা যায়।
বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, শিশু রাইছাকে কিছুদিন পূর্বে মেডিকেল সহকারী ডা. এনামুল হক তুহিনকে দেখিয়েছিল। তখন তিনি এনএসওয়ান ও সিবিসি পরীক্ষা করান। তাতে ডেঙ্গু নেগেটিভ হয় তবে তার প্লাটিলেট কম হওয়ায় ওই চিকিৎসক শিশুটিকে বরিশালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে বরিশালের চিকিৎসক তালুকদার মজিদকে দেখায়। বরিশালের পরীক্ষায় ওই রোগীর এনএসওয়ান নেগেটিভ ও প্লাটিলেট স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম আসে। স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে ডা. তালুকদার মজিদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবন করায়। শনিবার দুপুরের দিকে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই শিশুটি মারা গেছে। তবে, শিশুটির ডেঙ্গুর সকল লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে।
এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি তা এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী সবাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে না, অনেকেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আবার অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আমাদের মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, যারা হাসপাতালে না এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতোপূর্বে মারা গেছেন অথবা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের নাম-পরিচয়সহ সকল তথ্য সংগ্রহ করে জমা দিতে। যা যাচাই-বাছাই করে সঠিক তালিকা করা হবে। যাতে সরকারি ও বেসরকারি হিসাব একই থাকে।