বাংলারজমিন
তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ১৭২ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ
বাংলারজমিন ডেস্ক
(৪ ঘন্টা আগে) ২৫ মে ২০২৫, রবিবার, ৭:২২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:২২ অপরাহ্ন

ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পুশইন অব্যাহত রেখেছে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। রোববারও তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ১৭২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১২১ জন, সিলেটের বিয়ানীবাজার দিয়ে ৩২ জন, মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন রয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ থামছেই না। সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল জোরদার করলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পুশইন অব্যাহত রেখেছে। রোববার ভোরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ আরও ১২১ জনক আটক করেছে বিজিবি। বিএসএফ তাদের ঠেলে পাঠিয়েছে। আটককৃতরা বাংলাদেশি নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে বড়লেখা সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে ভারত থেকে অনুপ্রবেশকালে মোট ২৪০ জনকে আটক করলো বিজিবি। বিজিবি সূত্র জানায়, রোববার (২৫ মে) ভোরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ ১২১ জনক আটক করে বিজিবি। এরমধ্যে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লাতু বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা ৭৯ জনকে এবং পাল্লাথল বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা ৪২ জনকে আটক করে। তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে সকালে বিজিবি তাদের বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করেছে। বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান ১২১ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার দুপুরে জানান, আটককৃতদের বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকার বলেন, বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ ১২১ জনক আটক করেছে বিজিবি। সকালে তাদের বড়লেখা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা এলে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হবে।
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৩২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। আটককৃত ৩২ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ১১ জন নারী ও ১২টি শিশু রয়েছে। সকালে বিয়ানীবাজার সীমান্তের বড়গ্রাম এলাকা দিয়ে তাদের পুশইন করে বিএসএফ।
বিজিবি জানায়, ৫২ ব্যাটালিয়নের একটি টহল দল বড়গ্রাম সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ প্রবেশের সময় তাদের আটক করে। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওয়াগ্রাম প্রগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার মৃত রহমত আলীর ছেলে সুফিয়ান আলী (৬৫), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৫০), ছেলে আমিনুল হক (৩৪), তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৩২), মেয়ে ফেরদৌস (১২), মাহী (৭), মিম (৪), একই এলাকার বাবলু (৩০), শিউলী (২৬), লাভলী (৭), দুলাল মিয়া (৪০), শিল্পী বেগম (৩৬), রিনা থাতুন (১২), আবু সাইদ (৮ মাস), মর্জিনা খাতুন (৩৫), মজিদ (১১), বুলবুল (৩২),জোবেদা (২৬), জাকির (৭), এনামুল (২৮), দিনা (২৩), দিন ইসলাম (৮), দিন মোহাম্মদ (৫), সাত্তার আলী (১২), জান্নাতুল (৩৫), রহিম (১৫), সাথী (১৪), রবিউল (৯), মহির আলী (৪০), আশিদা (৩৫), আব্দুল্লাহ (৭) ও আশিক (২)। তারা সবাই ভারতের রাজস্থানের একটি ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। পুশইন হওয়া সুফিয়ান আলী জানান, তারা প্রায় ১৫ বছর পূর্বে ভারতে পাড়ি জমান। গত ২মে কর্মস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়। এরপর ৩ দিন আগে হেলিকপ্টারে করে তাদের গৌহাটি বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের প্রত্যেকের সাথে থাকা টাকা-পয়সা,মোবাইল ফোন, কাপড়-চোপড় রেখে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করে তারা। অনেককে খাবার পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজারের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান পিপিএম বলেন, আটক ৫২ জনের সবাই বাংলাদেশি, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের কাঁটাতারের পাশ দিয়ে শূন্যরেখার একটি বিলে ছেড়ে দেয় বিএসএফ। সেখান থেকে বিজিবি তাদের আটক করে।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান জানান, ৩২ জনকে থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি। আদালতের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হবে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ১৯ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল ভোর রাতে জেলার মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর মাঝেরপাড়া সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেয় বিএসএফ। সীমান্ত পার হয়ে উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থান করলে পুলিশ তাদের আটক করে থানা হেফাজতে নেয়। খবর পেয়ে মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা এসে উপস্থিত হন।
আটককৃতদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী ৯ জন শিশু, ৫ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছেন। তারা হলেন- কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার কাঠগিরি গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে মোমেনা খাতুন, তার ৩ ছেলে মোজাম্মেল হক (২৩) মোস্তাক আহমেদ (১৯) ও কাবিল (১১), একই জেলার নাগেশ্বরী থানার জয় মঙ্গল, এগরো মাথা গ্রামের জালালউদ্দীনের ছেলে মইনুল ইসলাম, স্ত্রী কাঞ্চন বেগম, ছেলে কারণ (১৪), রবিউল (৭) ও মেয়ে মরিয়ম (৪), লালমনিরহাট সদর থানার চুঙ্গগাড়া গ্রামের মৃত গণেশ চন্দ্র পালের ছেলে নিতাই চন্দ্র পাল, তার স্ত্রী গীতা রানী পাল, মেয়ে পার্বতী পাল (১৫), পূজা রানী পাল (৭) ও আরতী পাল (৩), কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার কুঠিচন্দ্র খানা গ্রামের খলিলের ছেলে আমিনুল ইসলাম, স্ত্রী পারুল, দুই মেয়ে আমেনা (৪) এবং আরফিনা (১১ মাস)।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা বাংলাদেশের নাগরিক। বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে বসবাস করতেন। ৬-৭ দিন আগে তাদেরকে ভারতের হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর জেলে রাখা হয়। পরে রোববার ভোরবেলায় মুজিবনগরের সোনাপুর মাঝেরপাড়া সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয়া হয়। এ বিষয়ে মুজিবনগর থানা অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, তারা সীমান্ত পার হয়ে কেদারগঞ্জ বাজারে বিআরটিসি কাউন্টারে অবস্থান করেছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদেরকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।