দেশ বিদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ: আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবারবাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও স্বাস্থ্যখাতের অগ্রদূত ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিফ শামীম। তার মতে, শুল্কের কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান ভিত্তি তৈরি পোশাক খাত।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করা ছিল। এর সঙ্গে নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তাই এই শুল্কহার কার্যকর হলে, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। আর শুধু পোশাক কারখানাগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে-বিষয়টি তা নয়। এর ধাক্কা ছড়িয়ে পড়বে পুরো অর্থনীতি যেমন; ব্যাংকিং, বীমা, পরিবহন, বন্দর, প্যাকেজিং, রপ্তানি ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরেই। এতে করে অনেক কারখানা টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাবে। এ অবস্থায় চলমান এই সংকট উত্তরণে সরকার টু সরকার (জিটুজি) আলোচনা ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসা, যাতে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা বা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যায়। আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনে সহ-সভাপতি প্রার্থী সাকিফ শামীম আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ব্যবসায়ী সমাজ উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্কহার কমিয়ে আনার বিষয়ে জোর দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, শুল্কছাড়ের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত নেগোসিয়েশন হবে।
সাকিফ শামীম বলেন, মার্কিন বাজারে দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ পণ্য পাঠানো হয়। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা না থাকায় ইতিমধ্যেই মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে রয়েছে।
নতুন এই শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের পণ্যগুলো আরও বেশি অপ্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক কারখানার টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর। এই পেশায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকই নারী, যারা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। তিনি বলেন, বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে আমদানিকারকেরা ক্রয়াদেশ বাতিল করবে। এতে ছোট ছোট কারখানা বসে যাবে। অন্যদিকে বড় ব্র্যান্ডগুলোর অর্ধেক শুল্ক আমাদের দিতে হবে। সেটি হলে আমাদের বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে সংকট তৈরি হতে পারে। কারণ, তখন অনেকে ইইউ’র ক্রয়াদেশ নিতে চাইবে। তাতে পোশাকের দাম কম দেয়ার সুযোগ নিতে পারেন ইইউ’র ক্রেতারা।