দেশ বিদেশ
বৃষ্টিতে নাকাল জনজীবন, দক্ষিণ সিটির ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন
স্টাফ রিপোর্টার
১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবারসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে দুইদিন ধরে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি বুধবার সারাদিন ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, ধানমণ্ডি, মহাখালী, পুরান ঢাকাসহ নিম্নাঞ্চলের বেশক’টি এলাকায় পানি জমে গেছে। জলাবদ্ধতা তৈরি হয় বিভিন্ন অলিতে-গলিতে। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেছে। সড়ক-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। নোয়াখালীতেও রয়েছে বন্যার শংকা।
বুধবার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে আগামী ১২০ ঘণ্টা (পাঁচদিন) সারা দেশেই অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। শঙ্কা প্রশমিত হলেও বজ্রসহ বৃষ্টি হবে। নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে ফুটপাথের ব্যবসায়ী ও পায়েহাঁটা মানুষেরা বেশি দুর্ভোগে ছিলেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশকে যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে এবং ব্যবসায়িক কাজে যারা বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন তারা সারা দিনই বৃষ্টির জঞ্জালে ভুগেছেন। বৃষ্টির কারণে যানবাহনের চাপ কমেনি। শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশকে যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। গণপরিবহনে যাত্রীদের কমতি ছিল না। রিকশা, সিএনজি পেতেও যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবুও প্রয়োজনে মানুষ বাড়তি ভাড়া গুনে গন্তব্য যান। ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, এই এলাকার (হকার্স মার্কেট এলাকা) ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে আছে। পানি চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। মানুষের চলাফেরাতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। সিটি করপোরেশনের লোকেরা এলেও বারবার এই সমস্যাটা হয়। এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা আফরোজা সুলতানা শোভা বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে কিছুটা ভিজেছি। এরপর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই অর্ধেক ভিজে গেছি। এমন বৃষ্টি, ছাতা মানছিল না। গাড়িতে উঠাও কষ্টকর ছিল। পানি ছিটায় প্যান্টও ভিজে গেছে। এখন বেশ ঠাণ্ডা লাগছে। অফিসে কাজ করার জন্য বসতেও পারছি না। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আদিব হাসান বলেন, সকালে খিলগাঁও সরকারি কলোনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আনসার কোয়ার্টার এবং আশপাশের এলাকায় বুধবার সকালে হাঁটু সমান পানি জমেছিল। এ কারণে ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি হয়েছে।
জলাবদ্ধতা ঠেকাতে দক্ষিণ সিটিতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ- অব্যাহত বৃষ্টিপাতে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আবহাওয়ার পরিস্থিতির বিষয়টি জানিয়ে দক্ষিণ সিটি জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া, ওয়ার্ডভিত্তিক ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। অধিকন্তু, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হলে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯-৯০০৮৮৮ নম্বরে জানানোর জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে।