দেশ বিদেশ
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন অনুমোদন
ঢাকার সড়কে আসছে ইলেকট্রিক বাস
মোহাম্মদ রায়হান
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
রাজধানীর গণপরিবহনে নতুনত্ব আসছে। শিগগিরই ঢাকার সড়কে যোগ হচ্ছে ইলেকট্রিক বাস বা বৈদ্যুতিক বাস। পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক নগর পরিবহনের লক্ষ্যে চালু হবে ৪০০ বাস। আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের বেশির ভাগই বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণ ও যানজট কমাতে এবং সিটি বাসের সংস্কার করে ইলেকট্রিক বাস নামানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার (বিসিএপি) ফেজ ওয়ান নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ইতিমধ্যেই প্রকল্প ব্যয়ের নির্দিষ্ট অংশ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বায়ুর মান উন্নয়নে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার (৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা) অনুমোদন করেছে। যার একটি অংশ ব্যয় করা হবে ইলেকট্রিক বাস বাস্তবায়ন কাজে। অর্থাৎ, প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ উন্নত করা এবং পুরোনো, দূষণকারী ডিজেল বাসের পরিবর্তে শূন্য-নির্গমন বৈদ্যুতিক বাসের একটি বহর চালু করা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইলেকট্রিক বাস বাস্তবায়ন প্রকল্পটি সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। তবে প্রকল্পের কিছু বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আপত্তি আছে। যার ফলে এখনো অনুমোদন পায়নি প্রকল্পটি। চলতি মাসেই অনুমোদন পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে না। অর্থাৎ জুলাই ১ তারিখ থেকে ঢাকার সড়কে ইলেকট্রিক বাস আসার কথা থাকলেও তা গড়াতে পারে আগস্ট পর্যন্ত। বাসগুলো চলবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। এ জন্য তিনটি চার্জিং ডিপো নির্মাণ করা হবে। এগুলোর মধ্যে শুরুতে পূর্বাচলে ডিটিসিএর ১.৩ একর জায়গায় চার্জিং স্টেশনসহ ডিপো হবে। আরেকটি ডিপো হবে রাজউকের ঝিলমিল এলাকায়। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যাস ট্রানজিট ইঞ্জিনিয়ার (বিআরটি) মোহাম্মদ তুষার মানবজমিনকে বলেন, প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে আছে। প্রকল্পের জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে শুরুর কথা থাকলেও তা এখনই হয়তো হবে না। প্রকল্পের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অবজেকশন রয়েছে। অবজেকশনগুলো সমাধান করে ডকুমেন্টগুলো আবার রিভিউ করে আমরা শুরু করে দেবো। ইলেকট্রিকবাস এবং বাস রিফর্মের জন্য এ ব্যয় ধরা হয়েছে। ১৭৫ মিলিয়ন ডলার আমাদের এ প্রকল্পের জন্য রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য দুইটি আলাদা প্রকল্পের অর্থায়ন অনুমোদন করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, অনুমোদিত অর্থায়ন মূলত দুইটি প্রকল্পে ব্যয় হবে।
৩৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে পেট্রো বাংলার জ্বালানি খাত নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস কোম্পানি পেট্রো বাংলার জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করে গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। অন্য প্রকল্প হচ্ছে বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প, যার জন্য ২৯০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাংলাদেশে মারাত্মক বায়ুদূষণ মোকাবিলায় একটি ব্যাপক পদক্ষেপ নেবে। এই বৈদ্যুতিক বাসগুলো উন্নত পরিষেবা মানের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে একক অপারেটর মডেলের অধীনে পরিচালিত হবে। প্রকল্পটি বৈদ্যুতিক বাসগুলোর চার্জিং, পার্কিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ডিপো স্থাপন করবে। ৫টি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। দু’টি অকার্যকর কেন্দ্রকে আপগ্রেড করা হবে এবং মোবাইল যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র ও ২০টি মোবাইল যানবাহন নির্গমন পরীক্ষা ইউনিট মোতায়েন করা হবে। পরিবহন খাতে এই সম্মিলিত পদক্ষেপগুলো বার্ষিক প্রায় ২ হাজার ৭৩৪ টন প্রাথমিক পিএম ২.৫ নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পটি পরিবেশ দূষণ রোধে পরিবহন খাত থেকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বৈশ্বিক জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো এবং টেকসই নগর পরিবহনকে উৎসাহিত করতে কাজ করবে। বায়ুর গুণগত মান ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন এবং পরিবহন খাত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে এই প্রকল্পের প্রস্তাবনা। জানা গেছে, ২০২৫ সালে চারটি রুটে ইলেকট্রিক বাস চালু ও চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে শুরু হবে প্রকল্পটি। পরবর্তীতে অতিরিক্ত ১০০ বাস সংযোজন করা, দুটি চার্জিং ডিপো নির্মাণ করা, পুরোনো ডিজেলচালিত বাস অপসারণ শুরু করা, ডিজিটাল টিকিটিং ও লাইভ ট্র্যাকিং সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও ক্রমান্বয়ে ৪০০ বাস ও তিনটি ডিপোসহ সব কাজ সম্পন্ন করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় গড়াবে।
এরআগে, চলতি বছরের মে মাসে ৪০০ ইলেকট্র্রিক বাস চালুর বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ঢাকায় চলবে বৈদ্যুতিক বাস। গণপরিবহনের সমস্যার টেকসই সমাধান ও পরিবেশ রক্ষায় এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরবাসী পাবেন আধুনিক, নির্ঝঞ্ঝাট ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন সুবিধা। এটি শুধু যানজট ও দূষণ হ্রাসেই অবদান রাখবে না, বরং নাগরিক জীবনের মান উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় একই বিষয়ে কথা বলেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২ সংশোধনপূর্বক বাংলাদেশ নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় ৪০০টি ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত
অযথা - রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে নষ্ট হবে - সাধারণ বাস প্রয়োজন যার রক্ষণাবেক্ষণ সহজ