ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স রপ্তানি ও রিজার্ভে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন বা ২৭ শতাংশ’র বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন তারা। অন্যদিকে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডলার সংকট কমেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়েছে। এ ছাড়া ডলারের বাজারও স্থিতিশীল। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তথা ব্যাংকগুলোতে ডলার এখন ১২৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। আমদানিতেও ডলারের একই দাম পড়ে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স আহরণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপ কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
রেমিট্যান্স: গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বাড়তে থাকে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। একের পর এক রেকর্ড গড়ে রেমিট্যান্স। প্রতি মাসেই প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে। আর এর মধ্যদিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের নতুন রেকর্ড গড়লো ২০২৪-২৫ অর্থবছর। অর্থবছরের পুরো সময়ে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে প্রায় ২.৮২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে শেষ দিনে (৩০শে জুন) এসেছে ১১.৬ মিলিয়ন। আগের অর্থবছরের জুনে এসেছিল ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে সবমিলিয়ে প্রায় ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এই আয় আগের অর্থবছরের ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৬.৪২ বিলিয়ন ডলার বা ২৬.৮ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। বর্তমানে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এর কারণ রেমিট্যান্সের ডলারে দর বেড়েছে, খোলাবাজারের সঙ্গে ডলারের দরের ব্যবধান কমেছে। তাছাড়া হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যও কমেছে। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে।
রপ্তানি আয়: এদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক, ভারতের বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। গত মে মাসে ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১১.৪৫ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য মতে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৪৪.৯৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০.২০ শতাংশ বেশি। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়। 
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত থেকে, যা আবারো প্রমাণ করেছে যে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আরএমজি’র মধ্যে নিটওয়্যার থেকে আয় এসেছে ২১.১৬ বিলিয়ন ডলার এবং ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৮.১৯ বিলিয়ন ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল বাজারে স্থিতিশীল চাহিদা, পণ্যের বৈচিত্র্য, কর্মপরিবেশের মানোন্নয়ন, অটোমেশন ও পরিবেশবান্ধব কারখানায় বিনিয়োগের ফলে এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উৎসাহব্যঞ্জক হলেও ইউনিটপ্রতি দাম কমে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা চাপের মুখে আছি। আমাদের এখন উচ্চ মূল্যের পণ্য এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
রিজার্ভ: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে এসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আশাব্যঞ্জক চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গেল বছরের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক সহায়তার বৃদ্ধির ফলে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছাড়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিনে গত সোমবার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.৭১ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ মান অনুযায়ী, রিজার্ভ অবশ্য ২৬.৬৮ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক রিজার্ভে ঊর্ধ্বগতির পেছনে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক কাজ করেছে- রেকর্ড রেমিট্যান্স- একক মাস হিসেবে মার্চ ২০২৫-এ এসেছে সর্বোচ্চ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স।
বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ বৃদ্ধি- হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক ঋণ ও সহায়তা- আইএমএফ, এডিবি ও বিশ্বব্যাংক থেকে এসেছে নতুন ঋণ ও তহবিল সহায়তা।
আমদানি নিয়ন্ত্রণ-ডলার সংকট মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি ঘটেছে। তাতে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৬.০২ বিলিয়ন ডলার, যা বিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে কমে হয়েছে ১.৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে লেনদেনের ভারসাম্যে ৫.৫৯ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল, যা বিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে কমে হয়েছে ০.৬৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কেটে গেছে। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে দিয়েছে।
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status