দেশ বিদেশ
আশুলিয়ায় ৬ ছাত্র-জনতা হত্যা
সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন
স্টাফ রিপোর্টার
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবারজুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আশুলিয়ায় ৬ ছাত্র-জনতা হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও সাভারের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ ফর্মাল চার্জশিট দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। আগামী ১৩ই জুলাই মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এদিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন চার্জ দাখিলের ওপর শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ ও এমএইচ তামিম। এ সময় প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, মো. সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অভিযুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ৮ জন গ্রেপ্তার ও বাকি ৮ জন আসামি পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক আবদুল মালেক, সাবেক উপ-পরিদর্শক আরাফাত উদ্দীন, সাবেক উপ-পরিদর্শক শেখ আবজালুল হক, সাবেক উপ-পরিদর্শক কামরুল হাসান ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। পলাতক আসামিরা হলো- সাভারের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি এ এফ এম সায়েদ ও ওসি তদন্ত মো. মাসুদুর রহমান, সাবেক উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহা, রনি ভূঁইয়া, নির্মল কুমার দাস ও মো.আসাদুজ্জামান রিপন। সকালে পুলিশ হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হিল কাফি, শহিদুল ইসলামসহ ৭ জনকে প্রিজনভ্যানে করে আদালতে হাজির করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ৫ই আগস্ট আশুলিয়ায় আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হন এবং আরও একজন গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের লাশ ও আহত ব্যক্তিকে একটি ভ্যানে তুলে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। শুনানিতে ফারুক আহমেদ বলেন, আসামি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং পুলিশের উল্লিখিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে, আদেশ ও পরিকল্পনায় আসামি এ.এফ সায়েদ এর সরাসরি তত্ত্বাধায়নে সাবেক এসআই আব্দুল মালেক ম্যাচের কাঠিতে আগুন ধরিয়ে পুলিশের পিকআপ গাড়িতে নিক্ষেপ করলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।
ধূমপানরত এএসআই বিশ্বজিৎ রায় তার জ্বলন্ত সিগারেটটি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে থাকা লাশের উপর নিক্ষেপ করে। ওই সময় এক পুলিশ সদস্য একটি কাঠের বেঞ্চ জ্বলন্ত পিকআপ ভ্যানের উপর নিক্ষেপ করলে আগুনের তীব্রতা পায়। ফলে গাড়ির ভেতরে থাকা ৬ জনের দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। আসামি মাসুদুর রহমান, নির্মল কুমার দাস ও আরাফাত হোসেন ঘটনাস্থলে আসামি এ.এফ.এম সায়েদের কাছাকাছি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নেতৃত্বে ও নির্দেশনা প্রদান করে। তিনি বলেন, যখন পুলিশের গাড়িতে নিয়ে গিয়ে ছয়জনকেই আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় তাদের মধ্যে একজন তখনও জীবিত ছিলেন। নিহতদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি, আবুল হোসেনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত সংস্থা। কিন্তু এখনো একজনের নাম-পরিচয় অজানা রয়েছে।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, আশুলিয়ার মামলায় প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তাদেরকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে আগামী ১৩ই জুলাই ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বাকি ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পাশাপাশি পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন আগামী তারিখের পূর্বেই আসামিদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেন।
তিনি বলেন, এই ঘটনার নির্দেশদাতা, যারা গুলি করেছেন এবং গুলি করে হত্যার পরে লাশের উপরে আগুন দিয়েছেন তাদের সকলকেই মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে কোর্ট আমাদের প্রশ্ন করেন, হত্যা করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অপরাধ। কিন্তু লাশ পুড়িয়ে দেয়া কোন ধারার অপরাধ। আমরা বলেছি, এটি অপরাধ আইনের ৩ এর ২(এ) ধারার অপরাধ। এটি অন্যান্য অমানবিক আচরণের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।