দেশ বিদেশ
তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৬৭ জন, আহত ১৯৯৯
স্টাফ রিপোর্টার
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারমানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৬৭ জন এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ৯৯৯ জন। নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৫৭টি। অধিকার ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসের প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরেছে এবং পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রকে এর থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করছে। অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীদের পাঠানো প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৮টি, কারাগারে মৃত্যু ১৯ জন, মৃত্যুদণ্ডাদেশ ২৪টি, বিএসএফ কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনে নিহত ৬ জন এবং আহত ৯ জন, ৬৪ জন সাংবাদিক আক্রমণের শিকার, যৌন হয়রানির শিকার ১২ জন এবং গণপিটুনিতে মৃত্যু ৩৩ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে ৮ই আগস্ট একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলে জাতিসংঘের এক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২৫ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের শুরু থেকে পরবর্তী সময়ে সহিংস মব, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে হত্যাসহ গুরুতর প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। এই সময়ে হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন।
তাদের বাড়িঘরে হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে। হামলা হয়েছে মাজার, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায়ও। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন ব্যক্তিদের এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ভুক্তভোগীদের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সংগঠনটি সুপারিশে বলেছেন, ১. আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন এবং অমানবিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। ২. নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং রিমান্ডের নামে নির্যাতন বন্ধের জন্য ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সরকারকে নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপসোনাল প্রোটোকল অনুমোদন করতে হবে। ৩. গুমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৪. কারা কর্মকর্তাদের অনিয়ম-অবহেলা-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং কারাবন্দিদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। ৫. সর্বস্তরে মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকসহ সমস্ত মানবাধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। ৬. বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬, সন্ত্রাস দমন আইন, ২০০৯ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ সহ সমস্ত নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ৭. নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষণকারীসহ নারীদের ওপর সহিংসতাকারীদের বিষয়ে সালিশ করা বন্ধ করতে হবে এবং নারীর বিচার প্রাপ্তির জন্য পুলিশকে সঠিকভাবে তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। আদালতের মাধ্যমে নির্ধারিত যৌন হয়রানির সঙ্গা আইনে প্রতিফলিত হতে হবে। ৮. সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক হত্যা, নির্যাতনসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ভারতকে চাপ দিতে হবে। ভারতকে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আধিপত্য এবং আগ্রাসী আচরণ বন্ধ করতে হবে।